
এইডস ( বাঁচতে হলে জানতে হবে )
09 Oct, 2020 • aids
মরণব্যাধি এইডস-এ আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে বছরে প্রাণ হারায় আড়াইলাখ মানুষ৷ এই রোগে আক্রান্তদের ওষুধ পাওয়ার অধিকার যেমন রয়েছে, তেমনই তাদের কাজ পাবার অধিকারও নিশ্চিত করতে হবে৷ বিশ্ব এইডস দিবসে এই কথাই বলেছে জাতিসংঘ৷
বর্তমান বিশ্বের বহুলপরিচিত
একটি নাম
এইডস (AIDS)৷ এটি একটি মরণব্যধি
৷ এইডস
এর পুরো
অর্থ একোয়ার্ড
ইমিউন ডেফিসিয়েন্সি
সিনড্রোম৷ এইডস এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা
সংক্রমিত রোগ৷
উন্নত অনুন্নত
সকল দেশেই
এইচআইভি আক্রান্ত
হচ্ছে লক্ষ
লক্ষ নারী,
পুরুষ ও
শিশু৷ বিশেষ
করে ২০
থেকে ৪০
বছর বয়েসী
মানুষ বেশি
আক্রান্ত হয়৷
এইডস প্রথম
শনাক্ত করা
হয় আমেরিকাতে
১ঌ৮১ সালে৷
তবে প্রথম
দেখা যায়
১ঌ৭০ সালের
শেষদিকে আফ্রিকার
বিষুবীয় অঞ্চলে
এবং ১ঌ৭৮
সালে যুক্তরাজ্যে৷
এইচআইভি ভাইরাস
রক্তের শ্বেত
কণিকাগুলোকে নষ্ট করে দেয়৷ ফলে
এইচআইভি আক্রমণে
দেহের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা
হ্রাস পায়৷
যার ফলে
যেকোনো ধরনের
রোগে শরীর
খুব তাড়াতাড়ি
দুর্বল হয়ে
পড়ে৷
বাংলাদেশে এইডসের বিস্তার নিয়ে আলোচনার
সময় ঢাকা
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক, ড. আব্দুল্লাহ
আল মামুন
বললেন, ‘‘যদিও
ভৌগলিক অবস্থানের
কারণে বাংলাদেশ
যথেষ্ট ঝুঁকির
মধ্যে আছে,
তবুও পাশের
দেশগুলোর তুলনায়
বাংলাদেশে এইডসের বিস্তার অনেক কম৷
এইডস আক্রান্ত
মানুষের নিম্নলিখিত
লক্ষণ দেখা
যায়:
§ শরীরের ওজন কমে যাওয়া
§ ক্লান্তি বোধ করা
§ দীর্ঘদিন ধরে জ্বর থাকা
§ মুখে বা গলায় ঘা
§ বমিবমি ভাব বা বমি
§ এক মাসের বেশি সময়
ধরে ডায়রিয়া
§ মাথা, চোখ এবং মাংসপেশিতে
ব্যথা
§ গা ম্যাজ ম্যাজ করা
§ চর্মের ওপর নানা ধরনের
ফুসকুড়িঁ
§ নাক-কান-গলার সমস্যা
§ ঠোঁট ও যৌন অঙ্গের
চারপাশে ধীরে
ধীরে ফোসকা
ও ঘা
ছড়িয়ে পড়ে
এইডস রোগের
উৎস
:
§ রক্ত (Blood)
§ সিমেন (Semen)
§ সারভাইকো ভেজাইনাল সিক্রেশন (Secretion)
§ লালা (Saliva)
§ বুকের দুধ
§ সি.এস.এফ (CSF)
এইডস যেভাবে
ছড়াতে পারে
:
§ এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে
কনডম ছাড়া
যৌনমিলন করলে
§ এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত
অন্য কোনো
ব্যক্তি গ্রহণ
করলে
§ এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত
যন্ত্রপাতি যেমন- সুঁচ, চাকু, কাঁচি,
ব্লেড, ক্ষুর,
সিরিঞ্জ ইত্যাদি
ব্যবহার করলে
§ একই সরিঞ্জ দিয়ে শিরার
মাধ্যমে একাধিক
ব্যক্তি মাদকদ্রব্য
ব্যবহার করলে
§ এইডস আক্রান্ত নারী গর্ভধারণ
করলে গর্ভের
সন্তানেরও এইডস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
§ এইডস আক্রান্ত মায়ের বুকের
দুধ পানের
মাধ্যমে শিশু
এইডস আক্রান্ত
হতে পারে
যেভাবে ছড়ায়
না :
এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির
সঙ্গে যে
সব আচরণে
এইডসের ঝুঁকি
নেই --
§ হাতে হাত মিলালে বা
কোলাকুলি করলে
§ এক সঙ্গে বসবাস, খাওয়া
দাওয়া বা
খেলাধুলা করলে
§ একই পাত্রে খাদ্য গ্রহণ
করলে
§ একত্রে গোসল করলে বা
একই পুকুরে
গোসল করলে
§ হাঁচি, কাশি ও থুথুর
মাধ্যমে
§ বিড়াল, কুকুর, বা গৃহপালিত
পশু-পাখি
হাত দিয়ে
স্পর্শ করলে
§ রোগীর সঙ্গে একই বিছানায়
ঘুমালে বা
রোগীর জামা-কাপড়, তোয়ালে-গামছা, থালা-বাসন, গ্লাস
ব্যবহার করলে
§ একই পায়খানা ব্যবহার করলে
§ রোগীদের স্পর্শ করলে
§ খাদ্য, পানীয়, মশা, মাছি,
উকুন, আরশোলা,
তেলাপোকা বা
অন্য কোনো
কীটপতঙ্গের মাধ্যমে এইডস ছাড়ায় না
এইডস প্রতিরোধে
করণীয়
ব্যক্তিগত পদক্ষেপ :
§ স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া
অন্য কোনও
নারী বা
পুরুষের সঙ্গে
দৈহিক মিলন
অনুচিত
§ যৌনমিলনে প্রয়োজনে কনডম ব্যবহার
করা উচিত
§ অপরের দাড়ি কামানোর ব্লেড,
ক্ষুর ব্যবহার
করা উচিত
নয়
§ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যৌনমিলন
করা ঠিক
নয়
§ মাদকদ্রব্য ব্যবহার বন্ধ করতে
হবে
§ এইডস আক্রান্ত মহিলাদের গর্ভধারণ
করা উচিত
নয়
§ রক্ত গ্রহণ করার পূর্বে
এইচআইভি পরীক্ষা
করে নেওয়া
উচিত
§ সুঁচ ও সিরিঞ্জ একবার
ব্যবহার করা
উচিত
§ অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের সতকর্তা
অবলম্বন করা
উচিত
§ বিয়ের আগে দৈহিক মেলামেশা
করা উচিত
নয়
সম্মিলিত পদক্ষেপ
:
সাধারণ মানুষের
মধ্যে এইডস
সম্পর্কে তেমন
কোন ধারণা
দেখতে পাওয়া
যায় না৷
অথচ এইডস
প্রতিরোধ করতে হলে জনসাধারণের মধ্যে
এই বিষয়ে
পর্যাপ্ত জ্ঞান
থাকা প্রয়োজন৷
এ সম্পর্কে
সচেতন করতে
সম্মিলিতভাবে নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা
উচিত -
§ মাধ্যমিক পর্যায় থেকে শুরু
করে প্রতিস্তরের
পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে এইডস-এর সচেতনতা
সম্পর্কে একটি
অধ্যায় সংযুক্ত
করা৷ স্কুলের
শিক্ষকদের উচিত এইডস সম্পর্কে বিভিন্ন
ধরনের গল্প
বা কার্টুন
দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের
সামনে উপস্থাপন
করা, যেন
ব্যাপারটা তাদের কাছে সহজবোধ্য হয়৷
§ পেশাদার রক্ত দাতাদের রক্ত
প্রদানে বাধা
প্রদান করতে
হবে৷ আইন
প্রণয়নের মাধ্যমে
রক্ত বেচাকেনা
বন্ধ করতে
হবে৷
§ একজন সুস্থ মানুষকে স্বেচ্ছায়
রক্তদানে উত্সাহিত
করতে হবে৷
§ রেডিও, টেলিভিশন, নাটক, পত্রপত্রিকায়
বিভিন্ন বিনোদনের
মাধ্যমে জনগণকে
এইডস-এর
ভয়াবহতা সম্পর্কে
সচেতন করতে
হবে৷
§ পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা তাদের
কার্যক্রমের সঙ্গে এইডস সম্পর্কিত তথ্য
মানুষকে জানাতে
পারে৷
এইডস পরীক্ষা
রক্তের এইচআইভি
পরীক্ষার মাধ্যমে
আমরা এইডস
হয়েছে কিনা
জানতে পারি৷
বিনামূল্যে রক্তের এইচআইভি পরীক্ষা করানো
হয় এমন
কিছু প্রতিষ্ঠানের
ঠিকানা দেওয়া
হলো-
১. ইনস্টিটিউট
অব পাবলিক
হেল্থ (আইপিএইচ),
মহাখালী, ঢাকা
৷
২. ভাইরোলজি
ডিপার্টমেন্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল
ইউনিভার্সিটি (সাবেক পিজি
হাসপাতাল) ঢাকা
৩. আর্মড
ফোর্সেস ইনিস্টিটিউট
অব প্যাথোলজি,
ঢাকা৷
৪. এমএজি
ওসমানী মেডিক্যাল
কলেজ , সিলেট
.
৫. চট্টগ্রাম
মেডিকেল কলেজ,
চট্টগ্রাম ৷
৬. খুলনা
মেডিক্যাল কলেজ, খুলনা ৷
৭. ভাইরোলজি
ডিপার্টমেন্ট, ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলোজিক্যাল ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ,
মহাখালী, ঢাকা৷
এইডস আক্রান্ত
রোগীদের প্রতি
আমাদের কর্তব্য
:
সমাজের প্রত্যেক
মানুষের উচিত
এইডস আক্রান্ত
রোগীদের সঙ্গে
সহানভূতিপূর্ণ আচরণ করা৷ এইডস আক্রান্ত
রোগীকে অবহেলা
না করে
তার প্রতি
স্নেহ, মমতা
ও ভালবাসা
প্রদান করা,
যেন মানসিকভাবে
সে একটু
শান্তি পায়৷
কোনো যৌনকর্মীর
এইডস ধরা
পড়লে তাকে
অন্য কোনো
কর্মসংস্থনের ব্যবস্থা করে দেওয়া৷ এইডস
আক্রান্ত স্বামী
মারা গেলে
স্ত্রীকে কর্মসংস্থানের
ব্যবস্থা করে
দেওয়া৷ রোগীর
যে কোনো
প্রয়োজন হলে
এগিয়ে আসা৷
রোগীর জন্য
সুচিকিত্সার ব্যবস্থা করা৷
এইডস আক্রান্ত
রোগীদের পালনীয়
বিষয় :
এখন পর্যন্ত
এইডস রোগের
পুরোপুরি চিকত্ সা আবিষ্কৃত হয়নি৷
তবে কিছু
কিছু নিয়ম-কানুন মেনে
চললে একজন
এইডস রোগী
অনেক দিন
বেঁচে থাকতে
পারেন৷ যেমন-
§ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত৷
§ নিজেকে কর্মক্ষম রাখা, নিয়মিত
ব্যায়াম করা
ও ঘুমানো
উচিত৷
§ সম্ভব হলে চাকরি চালিয়ে
যেতে হবে।
§ চিকিত্সকের নিকট কোনও কথা
গোপন না
করে সবকিছু
খুলে বলা
উচিত।
§ মদ ও ধূমপান এড়িয়ে
চলা।
§ নিজেকে গুটিয়ে না রেখে
সবার সঙ্গে
মেলামেশা করা
উচিত৷
এইচআইভি আক্রান্তদের
অধিকার রক্ষায়
কিছু কিছু
বিষয়কে আইনে
পরিণত করার
আহ্বান জানিয়েছে
ডাব্লিউএইচও৷ সমকামী পুরুষদের মধ্যে এইচআইভি
সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে সবচেয়ে বেশি৷
আর এই
পরিস্থিতিতে চিকিৎসার
সুযোগ পাওয়া
অত্যন্ত কঠিন
হয়ে দাঁড়ায়৷
বিশ্বে এখনও
৮০টি দেশ
রয়েছে যেখানে
সমকামিতা বা
সমকামী সম্পর্ককে
অপরাধ হিসেবে
ধরা হয়
এবং ছয়টি
দেশে এই
অপরাধের শাস্তি
মৃত্যুদণ্ড৷